রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

গভীর সমুদ্রের ওয়ার্মের জিনোম আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষের বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে

ডিউটেরোস্টোমরা প্রাণিদের একটি বিশাল সুপারফাইলাম যেখানে সি কিউকাম্বার, সাপ, মানুষ সহ অনেকেই আছে। একটি গভীর সমুদ্রের অমেরুদণ্ডী প্রাণী acorn worms নিয়ে গবেষণার দ্বারা গবেষকগণ বর্তমানের সকল ডিউটেরোস্টোমদের কমন এনসেস্টরদের পূর্বপুরুষের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন যারা হাফ বিলিয়ন বছরেরও বেশি আগে বাস করত। এই গবেষণাটি Nature জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
photo credit: Ptychodera flava. Kunifumi Tagawa

প্রাণিদের তিনটি ভিন্ন গ্রুপ নিয়ে ডিউটেরোস্টোম সুপারফাইলাম গঠিত। এরা হল একর্ন ওয়ার্ম, একাইনোডার্ম (সি স্টারস, সি আর্চিনস ও তাদের রিলেটিভরা) এবং কর্ডেটস (সকল মেরুদণ্ডী এবং সি স্কোয়ার্টস এর মত কিছু অমেরুদণ্ডী)। এডাল্ট একর্ন ওয়ার্মরা ওশিন ফ্লোরে বাস করে। এদের বডি সফট, বাইলেটারাল সিমেট্রিক, গিল স্লিটস আছে যা মানুষের এমব্রায়োনিক স্টেজে থাকে। আমাদের এম্রায়োনিক স্টেজের সাথে একর্ন ওয়ার্মের এই সিমিলারিটিগুলো ডিউটেরোস্টোমদের এনসেস্ট্রাল জিনোমিক ফিচারগুলো জানার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
Okinawa Institute of Science and Technology Graduate University এর Oleg Simakov বলেছেন, “একর্ন ওয়ার্মগুলো সবচেয়ে প্রাচীণ ডিউটেরোস্টোম রিলেটিভ যা আমাদের ৫৭০ মিলিয়ন বছর পূর্বের ডিউটেরোস্টোমদের সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। এই একর্ন ওয়ার্ম এর স্যাম্পলগুলো আমাদের একটি সলিড কম্পারেটিভ প্লাটফর্ম দেয় ও আমাদেরকে ডিউটেরোস্টোমদের বিবর্তন সম্পর্কে অনেক তথ্য দেয়।” যেখানে অনেক কর্ডেট (বিশেষ কর ভার্টেব্রেট) যেমন বিড়াল, ঘোড়া, তিমি, এনশিয়েন্ট হিউম্যান এর জিনোম সিকুয়েন্স করা হয়েছে, ডিউটেরোস্টোমদের জন্য সেরকম জিনোম এখনও সিকুয়েন্স করা হয় নি।
তাই একটি বিশাল ইন্টারন্যাশনাল টিম নিয়ে Simakov ৩৭০ মিলিয়ন বছর পূর্বে সেপারেট হওয়া দুটো লিনিয়েজ এর দুটো একর্ন ওয়ার্ম এর সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স ও এনালাইজ করেন। এদের একটি হল প্রশান্ত মহাসাগরের Ptychodera flava (উপরের চিত্র) ও আটলান্টিক মহাসাগরের Saccoglossus kowalevskii (নিচের চিত্র)। এদের প্রথমটি একটি ফিডিং লারভা এর মধ্য দিয়ে ইনডিরেক্টলি ডেভেলপড হয় যা কয়েক মাস পর জুভেনাইল ওয়ার্মে মেটামরফোসিস করে। পরেরটি কয়েকদিনের মধ্যে ডিরেকটলি জুভেনাইল ওয়ার্মে ডেভেলপড হয়। আপনি এখানে এবং এখানে এই দুটি প্রজাতি এর ভিডিও দেখতে পারবেন। গবেষকগণ পরে এই দুই প্রাণীর জিনোমের সাথে অন্য প্রাণীদের জিনোমের মধ্যে তুলনা করেন।
যা সকল ডিউটেরোস্টোমকে এক করে, মোলাস্ক ও আর্থ্রোপডদের মত অন্য সকল প্রোটোস্টোমকে এদের থেকে আলাদা করে তা আমাদের আর্লি ডেভলপমেন্ট ওয়ে এর কিছু ফান্ডামেন্টাল ডিটেইল ছাড়া কিছুই না যা আমাদের মাতৃগর্ভে হয়েছিল। যেখানে এডাল্ট হিউম্যানের সাথে এডাল্ট একর্ন ওয়ার্মের কোন মিল নেই সেখানে আমাদের এব্রায়ো বা ভ্রুণ গুলো অনেকটাই এদেরই মত দেখতে। Brown University এর Casey Dunn বলেন, “Simakov ও তার কলিগদের আসল আবিষ্কারটি হল ডিউটেরোস্টোমদের জিনোম তাদের এমব্রায়োলজির মত এত বিশাল ইভোল্যুশনারি টাইমস্কেলে এক্সটেনসিভ কনজারভেশন দেখায়।”
Saccoglossus kowalevskii. John Gerhart

এই দলটি কিছু শেয়ার্ড ট্রেইট খুঁজে যা সর্বশেষ কমন ডিউটেরোস্টোম পূর্বপুরুষের থেকে পাওয়া গেছে। এখানে ৩০টিরও বেশি সিকুয়েন্স করা নোভেল ডিউটেরোস্টোম জিন আছে আ অন্যান্য বহুকোষী প্রাণীদের থেকে ড্রামাটিকালি ভ্যারি করে।
তারা স্পেসিফিক ডিউটেরোস্টোম জিনের ছয়টি কনজারভেটিভ ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছেন। এদের মধ্যে ফ্যারিঞ্জিয়াল্ গিল স্লিট এর ডেভেলপমেন্ট এর জিনও আছে। ফ্যারিঞ্জিয়াল গিল স্লিট হল বডি ওয়ালের ওপেনিং (দেহের খোলা অংশ, শ্বসনের কাজে ব্যবহৃত হয়)। এটা সকল ডিউটেরোস্টোমদের (আমরাও) জীবনের কোন না কোন সময়ে দেখা যায়। (আমাদের ক্ষেত্রে এটা কেবল ভ্রুণীয় দশাতেই দেখা যায়। একাইনোডার্মদের এটা ছিল, বিবর্তনেরর ধারায় এরা সেটা হারিয়ে ফেলেছে।) এই ফিচারগুলো আর্লি ডিউটেরোস্টোমদের সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এবং সম্ভবত আমাদের এই আত্যন্ত প্রাচীন পূর্বপুরুষদের লাইফস্টাইলের প্রধান অংশ।

নতুন ফসিল নির্দেশ করছে মানুষ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল

নিজেকে পৃথিবীর একমাত্র মানব প্রজাতি হিসেবে ভাবলে কিছুটা সুপারিওরিটির অনুভব হয়। আমাদের অনেক হিউম্যান রিলেটিভ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ইউরোপে নিয়ান্ডারথালরা প্রায় ৪০,০০০ বছর পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে যায় আর সেটা ঠিক তখন, যখন আমরা হোমো সেপিয়ান ইউরোপে যাই। এটা আমাদের নির্দেশ করে যে, ওদের তুলনায় একটু এডভান্স হবার দরুন আমরা তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে পেরেছিলাম।
photo credit: New discovery has put some teeth into our understanding of human evolution. Credit: S. Xing and X-J. Wu


সম্প্রতি চায়নাতে ৮০,০০০ থেকে ১২০,০০০ বছর আগের ৪৭টা হিউম্যান টিথ (মানুষের দাঁত) আবিষ্কৃত হয়েছে যেটা নির্দেশ করছে ইউরোপে বিস্তৃত মানুষের এশিয়াতে বিস্তৃত হবার চেয়েও দ্বিগুণ বেশি সময় লেগেছে। জার্নাল নেচারে পাবলিশ হওয়া রেজাল্টটি আমাদের কিভাবে মানুশ বিবর্তিত হয়েছিল ও ছড়িয়ে পড়েছিল এব্যাপারে আমাদের বর্তমান আন্ডারস্ট্যান্ডিংকে চ্যালেঞ্জ করে।
রিসার্চারগণ বিশ্বাস করে যে, আমাদের স্পিসিজটি পূর্ব আফ্রিকায় ১৯,০০০ থেকে ১৬,০০০ বছর আগে বিবর্তিত হয়েছে। এরপর ইসরাইলের আর্কিওলজিকাল সাইট Es Skhül এবং Jabel Qafzen এ পাওয়া মানুষের ফসিলগুলো নির্দেশ করে যে সেখানে তারা ছড়িয়ে যায় ৮০,০০০ থেকে ১২০,০০০ বছর আগে। যাই হোক, এই স্যাম্পলগুলো কিছু আর্কাইক ফিচার প্রিজার্ভ করে যা বলে এরা মডার্নিটির একেবারে কাছে ছিল কিন্তু সম্পূর্ণভাবে মডার্ন ছিল না। তাই ভাবা হয়, এরা আফ্রিকা থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত আফ্রিকান কন্টিনেন্ট এর বর্ডার অতিক্রম করতে পারে নি। এর অর্থ হল মডার্ন হিউম্যান ইউরোপের গেটেই ছিল। কিন্তু ইউরোপে নিয়ান্ডারথালদের ল্যান্ডে প্রবেশ করতে এদের ৫০,০০০ বছর লেগে গিয়েছিল।
জেনেটিক স্টাডিগুলো ইন্ডিকেট করে যে, প্রাথমিক সফল আউট অব আফ্রিকা মাইগ্রেশন হয়েছিল প্রায় ৬০,০০০ বছর আগে। কিন্তু চীনের Institute of Vertebrate Paleontology and Paleoanthropology of Beijing এর রিসার্চারদের দলের সাউদার্ন চায়নার Fuyan (Daoxian) গুহায় পাওয়া দাঁতগুলো সত্যি সত্যিই মডার্ন। দলটি দাঁতগুলোকে ডেটিং করে দেখেছেন এগুলো ৮০,০০০ বছর পুরনো যেটা নির্দেশ করছে, আগে যা ভাবা হত তার চেয়ে অনেক আগেই এরা এশিয়াতে উপস্থিত ছিল। এর অর্থ এই যে, এনাটমিকালি পূর্ণাঙ্গ মডার্ন হিউম্যান এশিয়াতে ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০ বছর আগেই বাস করত যা ইউরোপ ও ইস্টার্ন মেডিটেরিয়ান এর থেকে অনেক আগে।
তাহলে নিয়ান্ডারথালদের সম্পর্কে আমদের ধারণা অনেকটাই বদলে গেল। আমরা যেমনটা আগে ভেবে এসেছিলাম, আগ্রিকা থেকে আসা কালচারালি ও বায়োলজিকালি সুপারিয়র হোমো সেপিয়েনদের ইনভ্যাশনের কারণে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, ব্যাপারটা এতটা সরল নয়। কিন্তু তাহলে মানুষের নিয়ান্ডারথালবিহীন এশিয়াতে স্প্রেড করা এত সহজ হয়েছিল কেন ইউরোপের তুলনায়? ইউরোপে এই প্রজাতিটিকে খুব প্রতিকূল সাবফ্রিজিং উইন্টার এর আবহাওয়া এর উপর মাস্টারিং করতে হয়েছিল যা কোন ট্রপিকাল অঞ্চলের প্রজাতির জন্য অনেক কঠিন। হয়তো অনেক দিনের প্রতিকূল শীতের আবহাওয়ার কারণে নিয়ান্ডারথালরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর সেসময়েই হয়তো হোমো সেপিয়েনরা ইউরোপে নিজেদের রাজত্ব তৈরি করে।

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

সর্বপ্রথম চার পায়ে দাঁড়ানো প্রাণী : বুনোস্টেগস আবিষ্কার

আধা জলহস্তী ও আধা গিরগিটির মত দেখতে ছবির এই প্রি-রেপটাইল বা প্রাথমিক সরিসৃপটিকে এখন বিজ্ঞানীরা আমাদের জানা প্রাণিদের মধ্যে চার পায়ের সবকটা ব্যবহার করে হাঁটা প্রথম প্রাণী বলে মনে করছেন। Bunostegos akokanensis নামের এই প্রাণিটি আজ থেকে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান আফ্রিকান দেশ নাইজার অঞ্চলে টিকে ছিল। এই প্রাণিটি প্যারেইয়াসর গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত। এই প্রাণিটি থেকেই বিবর্তিত হয়ে কচ্ছপের আবির্ভাব বলে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বহুদিনের একটি বিতর্ক চলছে।


"বুনোস্টেগস (Bunostegos) এর সময়ের অনেক প্রাণীরই এদের মত একই রকম আপরাইট অথবা সেমি আপরাইট হাইন্ড লিম্ব পোসচার (পেছনের পা)। কিন্ত বুনোস্টেগস এর মধ্যে যে জিনিসটি অন্য সবার থেকে আলাদা তা হল এদের ফোরলিম্ব বা সামনের পা।” জানিয়েছেন মরগান টার্নার, যিনি ভার্টেব্রাটা প্যালেওন্টোলজি জার্নালে পেপারটি পাবলিশিং এ কোঅথরিং করেন। তিনি বলেন, “এদের ফোরলিম্ব বা সামনের পায়ের যে স্ট্রাকচার দেখা যাচ্ছে তা এদের হামাগুড়ি দিতে এলাউ করবে না। আর এই ব্যাপারটাই বুনোস্টেগসদের মধ্যে ইউনিক।" 

আগে ভাবা হত যে, বুনোস্টেগস সহ অন্যান্য সমস্ত প্যারেইয়াসোররা হামাগুড়ির মাধ্যমে চলত। এইসব প্রাণিদের শরীরে নিচের দিকে তীর্যকভাবে একটি অঙ্গ লাগানো থাকত যা ভূমিকে স্পর্শ করত ঠিক আজকের গিরগিটি ও স্যালাম্যান্ডারদের মত। প্রাণিরা সম্পূর্ণভাবে দাঁড়ানোর জন্য বিবর্তিত হবার আগে ভূমিতে এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় যাবার জন্য এটাই ছিল আদীমতম উপায়।
এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই হামাগুড়ি দেয়া অবস্থা থেকে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ট্রাঞ্জিশন হওয়াটা আগের ধারণার সময়ের চেয়ে আরও আগেই হয়ে গিয়েছিল। বুনোস্টেগসের ফসিল সবার প্রথমে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওন্টোলজিস্টদের দৃষ্টি কারে ২০০৩ সালে। টার্নার যখন এদের ফসিল দেখছিলেন তখন তিনি ভাবেন, অবশ্যই এদের লিম্বগুলো অবশ্যই শরীরের সরাসরি নিচে অবস্থিত।
শোল্ডার জয়েন্ট বা ঘাড়ের জয়েন্টগুলো এমনভাবে কোণ করে আছে যে এদের হিউমেরাস বা আপার আপ বোন এর দেহের সাইডওয়ে বা পাশাপাশি অবস্থানে আটকে থাকা অসম্ভব। তার উপর বেশিরভাগ হামাগুড়ি দেয়া প্রাণির হিউমেরাস টুইস্টেড বা পাঁকানো অবস্থায় থাকে যাতে পায়ের পাতা ও লোয়ার আর্ম মাটিতে পৌঁঁছাতে পারে আর এই ব্যাপারটা বুনোস্টেগাসদের হাড়ে দেখা যায় না যা নির্ধেশ করে এদের পাগুলোর পজিশন একইরকম উপায়ে ছিল না। আর এখানেই এভিডেন্সের শেষ নয়।
আগে ভাবা হত যে, বুনোস্টেগস সহ অন্যান্য সমস্ত প্যারেইয়াসোররা হামাগুড়ির মাধ্যমে চলত। এইসব প্রাণিদের শরীরে নিচের দিকে তীর্যকভাবে একটি অঙ্গ লাগানো থাকত যা ভূমিকে স্পর্শ করত ঠিক আজকের গিরগিটি ও স্যালাম্যান্ডারদের মত। প্রাণিরা সম্পূর্ণভাবে দাঁড়ানোর জন্য বিবর্তিত হবার আগে ভূমিতে এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় যাবার জন্য এটাই ছিল আদীমতম উপায়।
এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই হামাগুড়ি দেয়া অবস্থা থেকে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ট্রাঞ্জিশন হওয়াটা আগের ধারণার সময়ের চেয়ে আরও আগেই হয়ে গিয়েছিল। বুনোস্টেগসের ফসিল সবার প্রথমে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওন্টোলজিস্টদের দৃষ্টি কারে ২০০৩ সালে। টার্নার যখন এদের ফসিল দেখছিলেন তখন তিনি ভাবেন, অবশ্যই এদের লিম্বগুলো অবশ্যই শরীরের সরাসরি নিচে অবস্থিত।
শোল্ডার জয়েন্ট (1), হিউমেরাস (2), হাঁটুর ন্যায় এলবো জয়েন্ট (3), এবং দীর্ঘ লোয়ার আর্ম (4) আমাদের নির্দেশ করছে যে বুনোস্টেগস দাঁড়াতে পারত।
শোল্ডার জয়েন্ট বা ঘাড়ের জয়েন্টগুলো এমনভাবে কোণ করে আছে যে এদের হিউমেরাস বা আপার আপ বোন এর দেহের সাইডওয়ে বা পাশাপাশি অবস্থানে আটকে থাকা অসম্ভব। তার উপর বেশিরভাগ হামাগুড়ি দেয়া প্রাণির হিউমেরাস টুইস্টেড বা পাঁকানো অবস্থায় থাকে যাতে পায়ের পাতা ও লোয়ার আর্ম মাটিতে পৌঁঁছাতে পারে আর এই ব্যাপারটা বুনোস্টেগাসদের হাড়ে দেখা যায় না যা নির্ধেশ করে এদের পাগুলোর পজিশন একইরকম উপায়ে ছিল না। আর এখানেই এভিডেন্সের শেষ নয়।

টক্সিন রেজিস্টেন্স এর মাধ্যমে বিবর্তন সম্পর্কে কিছুটা ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব!

ব্যাঙ , কিছু উদ্ভিদ, কিছু পোকা, সাপ, বেজি থেকে শুরু করে অনেক জীবেরই টক্সিন বা বিষের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাধীনভাবে বিবর্তনের দ্বারা ডেভেলপ করেছে একটি অভিন্ন মোলিক্যুলার মেকানিজমের ফলে। এই গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে। আর এই গবেষণাটি একটা ব্যাপারে সাজেস্ট করছে। আর সেটা হল বিবর্তনের কিছুটা প্রেডিক্টিবিলিটি আছে, অর্থাৎ বিবর্তন সম্পর্কে কিছুটা ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব।
কনভারজেন্ট ইভোল্যুশনের উদাহরণ পাখি, বাদুড়, টেরোসর এর পাখা, ডলফিন ও মাছের দেহের গঠন সহ অনেক জায়গায়ই দেখা যায়। কিন্তু মলিকুলার বা আণবিক লেভেলে কনভারজেন্স এর ডকুমেন্টেড উদাহরণ অনেক কম এবং কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপেই তা সীমাবদ্ধ। নতুন এক গবেষণায় লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন এর নিকোলাস কেসওয়েল ও তার সহকর্মীরা প্রাণীজগতের এক বিস্তৃত অংশে কনভারজেন্ট মলিকুলার ইভোল্যুশন খুঁজে পেয়েছেন।
ট্রু টোড, মিল্কউইড, ফক্সগ্লাভ এবং ওলিয়েন্ডার প্ল্যান্টস কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড টক্সিন প্রস্তুত করে থাকে। এই টক্সিনগুলো মলিকুলার কর্ক হিসেবে কাজ করে যা স্নায়ুর কোষ ঝিল্লীর সোডিয়াম পটাশিয়াম পাম্পকে বন্ধ করে দিতে পারে যার ফলে হার্ট ফেইল করে। যেসকল সরীসৃপ এইসব টোড বা ব্যাঙ খেয়ে বেচে থাকে তারা এই টক্সিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ডেভলপ করতে পারে যা তারা মিউটেশনের দ্বারা বিবর্তনের ফলে পেয়েছে। আর এই মিউটেশনটি হয়েছে চারটি ভিন্ন লিনিয়েজের সরীসৃপের মধ্যে। যার মধ্যে ৩টি সাপ ও ১টি গিরগিটি। টক্সিন এদের নার্ভ এর ঝিল্লীর সোডিয়াম পটাশিয়াম পাম্প বন্ধ করতে পারে না।
এই কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড টক্সিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যাবস্থা একই মোলিকুলার মেকানিজমের মাধ্যমে অনেক পোকা, ব্যাঙ, টোড ইটিং টোড, রোডেন্ট এবং ইউরোপিয়ান হেজহগদের মধ্যেও ডেভলপ করেছে। গবেষকদের দলটি এদের সবার মধ্যে একই রকম পরিবর্তন দেখতে পান। কেসওয়েল বলেন, ‘কোন ইমপেয়ারিং ফাংশন ছাড়া জিনের এরকম রেজিস্টেন্স ডেভেলপ করার চান্স অনেক অল্প যা আমাদের সাজেস্ট করে যে, বিবর্তন হাইলি প্রেডিক্টেবল হতে পারে। যখন সাম্ভাব্য সমাধানের রেঞ্জ যথেষ্ট পরিমাণে লিমিটেড হয়ে যায় তখন বিবর্তন একটি এক্সপেক্টেড পথেই ধাবিত হয়।'

বিএমসি ইভোল্যুশনারি বায়োলজিতে আরেকটি পেপার প্রকাশিত হয়েছে। এখানেও ইভোল্যুশনের প্রেডিক্টেবিলিটি বা ভবিষৎবাণী করার ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। এখানে দেখানো হয়েছে যে, ক্লাইমেট চেঞ্জ হলে মরুভূমির আইসোলেটেড এন্ট বা পিঁপড়াদের কলোনীতে বিভিন্ন পপুলেশনের সব রাণীরা তাদের পাখা হারিয়ে ফেলে। এর কারণ হল সেসময় ওড়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয় কারণ এতে তাদের মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।